মাধবপুর (হবিগঞ্জ) ১২ আগস্ট : মাধবপুরের এক ছোট ভাই তার নিজের একটি কিডনি বড় ভাইকে দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার আশা জাগালেন। কথায় আছে ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’। সত্যিই তাই। রক্তের বাঁধন এতটাই শক্তিশালী যে, নিজের জীবন দিয়ে হলেও রক্তের কাউকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে মানুষ হাজার বার চেষ্টা করে। বড় ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসার এমন বাস্তব প্রমাণ দিয়েছেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামের মানিক মিয়ার ছোট ছেলে আতাউল ইসলাম পলাশ। আপন বড় ভাইকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিয়েছেন তিনি।শনিবার (১২ আগষ্ট) সকালে ঢাকা বারডেম হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচার শেষে তারা দুই ভাই বর্তমানে চিকিৎসাধীন। ভাইয়ের জন্য ভাইয়ের এমন ভালোবাসা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে,প্রশংসা কুড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামের মানিক মিয়ার তিন পুত্র সন্তান রয়েছে। মানিক মিয়া চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদে দফাদার হিসাবে কর্মরত রয়েছে। সৌদি প্রবাসী বড় ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত গড়েছেন ছোট ভাই। নিজের জীবনের কথা না ভেবে একটি কিডনি দিয়ে বড় ভাইয়ের জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,দুই বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান দফাদার মানিক মিয়ার বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম সবুজ। এর মধ্যে হঠাৎ সাইফুল ইসলাম সবুজের কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। পরে সাইফুল ইসলাম সবুজ সৌদি আরব থেকে চলে আসেন দেশে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর ডাক্তার সাইফুল ইসলাম সবুজ এর দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর থেকে ডায়ালাইসিস করেও তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরিবারের পক্ষে সাইফুল ইসলাম সবুজ এর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা মোটেও সম্ভব ছিল না। তাছাড়া কিডনিই বা পাওয়া যাবে কোথায়। এ নিয়ে ছিল ব্যাপক দুশ্চিন্তা। চিকিৎসকরা তার দুটি কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা বলেন। এমন দুঃসংবাদে ভেঙ্গে পরে পরিবারটি। সেই সময় সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম সবুজ এর আপন ছোট ভাই আতাউল ইসলাম পলাশ ভাইকে বাঁচাতে তার পাশে দাঁড়ান। স্বেচ্ছায় নিজের কিডনি বড় ভাইকে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরে শনিবার পরিবারের সবার মতামতের ভিত্তিতে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে তাদের অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই দিন সকালে ৬টার দিকে তাদের অস্ত্রোপচার শুরু হয়। ৪ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর বর্তমানে দুই ভাই সুস্থ আছেন। সাইফুল ইসলাম সবুজের পিতা মানিক মিয়া কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং অপারেশনের পর দুই ভাই সুস্থ আছেন বলে জানান। চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সোহাগ জানান, সবার সহযোগিতায় সবুজের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এটি ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan